দিরাইয়ের ওমান প্রবাসী রফিকুলের চিকিৎসার জন্য কফিল কর্তৃক দুইকোটির উপরে পাঠানো টাকা বোন ও ভগ্নিপতির আত্মসাত
দিরাই প্রতিনিধিঃ-
সুদূর প্রবাসে ওমানে কর্মরত অবস্থায় সড়ক র্দূঘটনায় পতিত হয়ে বাকশক্তি ও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয় কোম্পানীর কফিল। কিছুদিন পরে কফিল ও ওমান সরকার রফিকুলের চিকিৎসা বাবত দুইকোটি তিনলাখ বাহাত্তর হাজার টাকা পাঠালেও মোট টাকাগুলোর মধ্যে চিকিৎসার নামে কিছু টাকা খরচ করা হলেও প্রায় দেড়কোটি টাকার উপর যৌথ একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে বলে গুরুতর অসুস্থ পঙ্গুত্ববরণকারী রফিকুলের ছোটবোন ও স্বজনদের অভিযোগ ।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়,ওমান ফেরৎ বাকশক্তি ও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ রফিকুল ইসলাম(৪৫) তিনি জেলার দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের ছাদিরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল বাছিতের ছেলে। সে মৃত আব্দুল বাছিত ও মাতা জজমালা বেগমের এক ছেলে রফিকুল ইসলাম ও দুই মেয়ে শাহানারা বেগম ও জাহানারা বেগম। পিতার মৃত্যুর পর রফিকুল ইসলাম ২০১৩ সালে অভাব অনটনের সংসারে সুখ ফিরিয়ে আনতে সোনার হরিণ ধরার স্বঁপ্নে বিভোর হয়ে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যর দেশ সুদূর প্রবাস ওমানে। দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে নিজ বাড়িতে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করলেও তিনি অবিবাহিত ছিলেন এবং প্রবাসে থেকে একই ইউনিয়নের মকসুদপুর গ্রামে দুটি পাড়ায় দুই বোনকে বিবাহ দেন। বড়বোন শাহানারা বেগমকে(৬০) মকসুদপুর গ্রামের মজুল হকের সাথে এবং ছোটবোন জাহানাার বেগমকে একই গ্রামের অন্যপাড়ায় মোঃ আবুল কালামের সাথে বিবাহ দেন।
গত ২০২০ সালে রফিকুল ইসলাম ওমানে কর্মরত অবস্থায় একদিন সড়ক র্দূঘটনায় পতিত হয়ে গুরুতর আহত হয়ে তার অঙ্গহানি ঘটার ফলে তিনি বাকশক্তি ও শ্রবণশক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেন। খবর পেয়ে তার কোম্পানীর কফিল তাকে ওমানে অনেকদিন চিকিৎসা শেষে তাকে গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরই মাঝে কোম্পানীর কফিল গুরুতর আহত রফিকুলের পরিবারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে তার চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। পরবর্তীতে আহত রফিকুলের আপন বড় দুই বোন (বড়বোন শাহানারা বেগম ও ছোট বোন জাহানাার বেগম) নামে দিরাই পূবালী ব্যাংক শাখায় (হিসাব নম্বর-২৮৬০১০১১৩৯৭৭১) যৌথ একাউন্ট খোল হয় এবং গত ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে এই যৌথ একাউন্টে দুই কোটি ৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা এসে জমা হয়। এর আগে গত ২০২৩ সালের ১৬ই জুন লুলু একচেজ্ঞ কোম্পানী এলএলসি (টিটি নম্বর ১২৭১০২৩১১৬৭২৪৮৩৬) ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একাউন্টে(একাউন্ট নম্বর-১০৮১২০০০০৪০৪৯) ডাচ বাংলা ব্যাংক শাখা শান্তিনগর ব্রাঞ্চ,৪১ চামেলিবাগ(গ্রিন পিচ),শান্তিনগর,ঢাকা-১২১৭) এ শাখায় মোট টাকাগুলো এসে এ্যাম্বাসি অব বাংলাদেশের মাধ্যমে জমা হয়। কিন্ত আহত রফিকুলের চলচাতুর বড়বোন শাহানারা বেগম,তার স্বামী মজুল হক,মেয়ে সিলেটে কর্মরত নার্স সেবিকা মিলে যৌথ একাউন্ট থেকে শাহানারার ছোটবোন জাহানারা বেগমকে ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে হবে বলে চেকে স্বাক্ষর নিয়ে এককোটি টাকা উত্তোলন করে শাহানারা তার ব্যক্তিগত একউন্টে ৫০ লাখ টাকা এবং তার মেয়ে সেবিকা বেগমের একাউন্টে আরো ৫০ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে নেন। দ্বিতীয় দফায় বড়বোন আরো টাকা উত্তোলন করবে এটা বুঝতে পেরে ছোট বোন জাহানারা চেক বইয়ে সই করতে রাজি না হওয়াতে প্রথমে তাকে টাকার লোভ দেখানো হয় তাতে ও রাজি না হওয়াতে চলচাতুর শাহানারা বেগম,তার স্বামী মজুল হক ও মেয়ে নার্স সেবিকা বেগম তাকে জাহানারা বেগমকে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যৌথ একাউন্ট থেকে আরো ৭০(সত্তর) লাখ টাকা উত্তোলন করে নিজ বাড়িতে দেয়াল ফিরিয়ে বিল্ডিং নির্মাণ কাজ শুরু করার পাশাপাশি দিরাই পৌর শহরে ৬ ডিসিমেল জায়গা নিজের নামে খরিদ করেন। এছাড়াও ছাদিরপুর ২০ লাখ টাকার,৬ লাখ টাকার বোরো জমি এবং ৮ লাখ টাকায় আরো ৪ কেদার জমি খরিদ করেন।
পূূবালী ব্যাংক শাখার তথ্য মতে ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ রফিকুলের বড়বোন প্রতারক শাহানারা বেগম,স্বামী মজুল হক ও মেয়ে সেবিকা আক্তার মিলে যৌথ একাউন্ট থেকে ইতিমধ্যে দুইকোটি তিনলাখ বারো হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন এবং ব্যাকে রয়েছেন মোট ষাট(৬০,০০০) হাজার ২০৫ টাকা আছে। এদিকে তাদের গুরুতর আহত ছোটভাই রফিকুল ইসলামকে মাঝে মধ্যে ঢাকা সিলেট নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে লোক দেখানো চিকিৎসা করানো হলেও রফিকুলের স্বজনদের অভিযোগ রফিকুলের বড়বোন শাহানারা বেগম,স্বামী মজুল হক ও মেয়ে সেবিকা ইতিমধ্যে প্রায় দেড়কোটি উপরে টাকা তারা যৌথ একাউন্টি থেকে সরিয়ে নিজের ও মেয়ের একাউন্টে ট্রান্সফার করে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের নামে দিরাই শহরের বাসার জায়গা খরিদ করা সহ কিছু নিজ এলাকায় বোরো জমিন খরিদ করে ফেলেছেন।
বাকশক্তি হারানো রফিকুলের আপন চাচাতো ভাই ও স্বজনদের অভিযোগ অবিলম্বে টাকা আত্মসাতকারী চলচাতুর গুরুতর পঙ্গুত্ব বরণকারী রফিকুলের আপন বড়বোন শাহানারা বেগম, তার স্বামী মজুল হক এবং তাদের মেয়ে (ভাগ্নি) সেবিকা বেগমকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে টাকা আত্মসাতের আসল রহস্য উদঘাটন সম্ভব।স্বজনরা আরো জানান অবিলম্বে সময় কালক্ষেপন না করে আত্মসাতকৃত সবগুলো টাকা উদ্ধারের মাধ্যমে গুরুতর আহত রফিকুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী ভারতের ব্যাঙ্গালুরে নিয়ে গেলে রফিকুল পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন।
এ ব্যাপারে গুরুতর আহত রফিকুলের দুই নম্বর বোন জাহানারা বেগম জানান,আমার ভাই প্রবাসে সড়ক র্দঘটনায় অঙ্গহানি ঘটে। সেখানকার ভিসার মালিক শত চেষ্টা করে ও আমার ভাইকে সুস্থ করতে না পেরে দেশে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে কোম্পানীর মালিক আমাদেও সাথে যোগাযোগ করে একটি একাউন্ট করে দিতে বলেন। আমার আপন বড়বোন চলচাতুর শাহানারা বেগম ,তার স্বামী(দূলাভাই) মজুল হক মিলে বড়বোন শাহানারা ও আমার নামে যৌথ একাউন্ট করে ওমানে কফিলের নিকট পাঠাইয়া দিলে কফিল আমার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশী টাকায় দুইকোটি তিনলাখ ৭২ হাজারের উপরে টাকা পাটিয়ে দেন। কিন্তু আমার বড়বোন ও ভগ্নিপতি আমার স্বাক্ষর নিয়ে প্রথমেই যৌথ একাউন্টি হতে এককোটি টাকা উত্তোলন করে বড়বোনের ব্যাক্তিগত একাউন্টে ৫০ লাখ টাকা তার মেয়ের একাউন্টে ৫০ লাখ টাকা সরিয়ে নেন। পরবর্তীতে আমার বড়বোন আমাকে আবারো ভাইয়ের চিকিৎসার কথা বলে আরো সত্তর লাখ টাকা উত্তোলন কওে তাদেও বাড়িতে দেয়াল ফিরিয়ে বাড়িতে বিল্ডিংয়ের কাজ চলমান আছে এবং দিরাইয়ে নিজেদেও নামে ৬ ডিসিমেল জায়গা খরিদ করেন এবং আরো বোরো জমিন খরিদ করেন। আমি চাই সরকার ও প্রশাসন দ্রুত আমার অসুস্থ ভাইয়ের চিকিৎসার দুইকোটির উপরে টাকা আত্মসাতকারী আমার বড়বোন শাহানারা বেগম ,তার স্বামী মজুল হক ও মেয়ে সেবিকাকে গ্রেফতার করে টাকাগুলো উদ্ধারের দাবী জানান।
এ ব্যাপারে অসুস্থ ছোটভাইয়ের চিকিৎসা বাবত কফিলের পাঠানো দুইকোািট তিনলাখ ৭২ হাজার টাকার অধিকাংশ টাকা আত্মসাতকারী শাহানারা বেগম স্বীকার করেন তার ব্যাক্তিগত একাউন্টে ৫০ লাখ এবং তার মেয়ে সেবিকা আক্তারের একাউন্টে আরো ৫০ লাখ টাকা সরিয়ে নেওয়ার কথা জানান। আর নিজ বাড়ি মকসুদপুরে দেয়াল ফিরিয়ে বিল্ডিং নির্মাণ করা,দিরাই শহরে জায়গা রাখা বোরো জমিন খরিদ করার বিষয়ে তাদের টাকা দিয়ে করা হচ্ছে বলে জানান। তবে ছোটবোন জাহানারা বেগম জানান বড়বোন ভাইয়ের সবগুলো টাকা দিয়ে বোন ও দূলাভাই মিলে তাদেও নিজের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে অসুস্থ রফিকুলের বড় ভগ্নিপতি ও প্রতারক শাহানারার স্বামী মজুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক অসুস্থ রফিকুলের ছোটবোন জাহানারা কর্তৃক অভিযোগ দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দোষ প্রমানিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দিরাই প্রতিনিধি
১০.১১.২০২৪
আপনার মতামত লিখুন :