সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে শেখ হাসিনার মনোনিত ৪ নেতাকে নিয়ে উল্লসিত মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা


Sylheter samachar24 প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২৩, ৩:৪৮ পূর্বাহ্ন /
সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে শেখ হাসিনার মনোনিত ৪ নেতাকে নিয়ে উল্লসিত মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের আনুষ্ঠানিক মতামত ছাড়াই স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এমপির দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত ৪ জন নেতার নাম ঘোষণায় আওয়ামী শিবিরে আনন্দের বন্যা বইছে।

বিরোধীয় সকল গ্রুপকে খুশী করার এরকম ব্যতিক্রমী সম্মেলন অতীতে আর হয়নি। সবাই বলছেন বঙ্গবন্ধু যেমন জনপ্রিয় ও গ্রহনযোগ্য নেতাদেরকে উপযুক্ত মূল্যায়ন করতেন তেমনি শেখ হাসিনাও তাই করলেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভরসাস্থল শীর্ষস্থানীয় দুজন নেতাকেই তিনি দলের সভাপতি সম্পাদক নিয়োজিত করেছেন। সে সাথে দলের ধারাবাহিক নেতৃত্বের গতিশীলতাও রক্ষা করেছেন।

বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কে সভাপতি ও জুনিয়র সহ-সভাপতিকে সাধারণ সম্পাদকের পদে নির্বাচিত করে সাংগঠনিক কার্যক্রমের শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতাকে অক্ষুন্ন রেখেছেন। এছাড়া ডান বামের সমন্বয়ে অপূর্ব সমন্বয়ও সাধিত হয়েছে এই সম্মেলনে। কমিটির মধ্যে ধারাবাহিক নেতৃত্বের ক্রমবিকাশ ঘটায় নতুন করে জেলার রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক এই সম্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুটকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান সহ-সভাপতি জননেতা নোমান বখত পলিনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেত্রীর নির্দেশেই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। পাশাপাশি বর্তমান সভাপতি বর্ষীয়াণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমানকে বাংলাদেশ  আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনকে জাতীয় কমিটির সদস্য ঘোষণা দেন তিনি।

ঘোষণার আগে আলহাজ্ব মতিউর রহমান সম্পর্কে কাদের বলেন,আমাদের নেত্রী আলহাজ্ব মতিউর রহমান সাহেবকে সম্মান করেন, তিনি নেত্রীর ঘোর বিশ্বস্থ লোক। আমরাও তাকে স্যালুট করি। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ২টায় স্থানীয় সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের  সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন,আলহাজ্ব মতিউর রহমান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপি ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। দলের শীর্ষস্থানীয় এ পদটিতে সিলেট বিভাগের ৩ নেতা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ এ পদে মূল্যায়ন করা হলো আলহাজ্ব মতিউর রহমানকে। জাতীয় কমিটির সদস্য পদটিও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এ পদে অতীতে সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দলীয় সাধারণ সম্পাদক আয়ূব বখত জগলুল দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে আস্থাভাজন ঘনিষ্ট ছিলেন। এ পদে ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনকে মূল্যায়ন করেছেন নেত্রী শেখ হাসিনা।

তবে শনিবারের সমাবেশে এবং অতীতের সকল সম্মেলনেই সবচেয়ে বেশী লোক যিনি জড়ো  করে থাকেন তিনি হচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের আরেক জেষ্ট সহ-সভাপতি জননেতা মুহিবুর রহমান মানিক এমপি। যিনি একজন সফল জননেতা থেকে তিল তিল শ্রম সাধনার মাঝে এখন গণমানুষের নেতায় পরিণত হয়েছেন। তাকে উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হতে পারে কেবল দলটির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ প্রদান করলে। এমন বক্তব্যও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। শেষ পর্যন্ত সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য ও পরীক্ষিত মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণ করা হলে অনায়াসে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হবে এমন প্রত্যাশা সকল নেতাকর্মীদের।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের সঞ্চালনায় সভায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান,প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি জৈবুনেছা হক,আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন,সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়াসেন গুপ্তা,সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক,সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন,মহিলা এমপি এড. শামীমা আক্তার খানম, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুরুল হুদা মুকুট, সাবেক এমপি এড.শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী,জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এড. আপ্তাব উদ্দিন, ড.খায়রুল কবির রুমেন এডভোকেট, যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার এডভোকেট আলী আমজাদ,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এড. নান্টু রায়,এড. হায়দার চৌধুরী লিটন,কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল,ছাতক পৌরসভার মেয়র কালাম চৌধুরী,সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান,শংকর দাস,জুনেদ আহমদ,পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, দপ্তর সম্পাদক এড.নুরে আলম সিদ্দিকী উজ্জল, গোলাম সাবেরীন সাবু ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক মো. নুর হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চৌদ্দবছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে,হিংসা করে লাভ নেই, অনেক জ্বালা অনেকের,সুনামগঞ্জ গ্রাম থেকে শহর হয়ে গেল,কত জ্বালা গাত্রদাহ হচ্ছে বিএনপির নেতাদের। অন্তর্জালা পদ্মাসেতুর জ্বালা,মেট্রোরেলের জ্বালা,আন্ডার পাসের জ্বালা,ফ্লাইওভারের জ্বালা,বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের জ্বালা,একদিনে একশত সেতু উদ্বোধনের জ্বালা একদিনে একশত রাস্তার উদ্বোধনের জ্বালা। সামনে রুপপুর,সামনে চট্রগ্রামে নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু মুজিব ট্যানেলের জ্বালারে জ্বালা। তিনি বলেন,জ্বালায় জ্বালায় মরে রেল কানেকশান হয়ে যাচ্ছে,সারাদেশে শুধু উন্নয়ন গ্রাম হয়ে যাচ্ছে শহর। জ্বালারে জ্বালা প্রাণে বাচেঁ না অন্তর জ্বালায়।

গণঅভ্যূত্তান কোথায় গেল ১০ই ডিসেম্বর কি হবে সরকারের,শেখ হাসিনার পতন হবে। শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। আর কি হবে খালেদা জিয়া ঢাকার রাজপথে বিজয় শোভাযাত্রা করবেন। তিনি বলেন,তারেক রহমান পালিয়ে গেছে লন্ডনে মুচলেখা দিয়ে। সেই যুবরাজ হাওয়াভবণে তিনিও নাকি ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ইং তারিখে দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। তাদের স্বপ্নঁ সবই আজ রসাতলে গেল।

তিনি আরো বলেন বিএনপি জামায়াতের সাথে ডান বাম মিলে ঐক্য হয়েছেন তারা ইউনিয়নব্যাপী পদযাত্রা শুরু করেছেন আর কাজ হবে না আন্দোলন এখন বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন হয়ে গেছে। তিনি তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে লন্ডনে আয়েশি জীবনযাপন করে ফেইসবুকে লাইভে এসে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির নির্দেশ দিচ্ছেন সাহস থাকলে আর সত্যিকারের দেশের মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতে হলে দেশে আসুন,সামনে আসুন।

সম্মেলনের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

ওবায়দুল কাদের বলেন,১ কোটি ২৩ লাখ ভূয়া ভোটারের তালিকা প্রস্তুত করে আজিজ মার্কা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও যারা ক্ষমতায় আসতে চায় তারাই হচ্ছে বিএনপি। এ দলটি এখন ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দারের মত নেতাশূন্য হয়ে দিশেহারা হয়ে আবুল তাবুল বলে বেড়াচ্ছে। এই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বাকীরাও পালানোর চেষ্টা করছে। তারা বিভাগীয় সভা সমাবেশ এর নামে টাকা ছড়িয়ে জঙ্গীবাদকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু যারা ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পীয়ন হয়েছিল বাংলার মানুষ আর তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায়না। তিনি বলেন,শেখ হাসিনা জাতির জনকের কন্যা,শেখের বেটি। তাঁকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। তিনি ওয়ান এলিভেন এর সময় পালিয়ে যাননি। আমি ওবায়দুল কাদেরও পালাইনি। শেখ হাসিনার সাহস ও শক্তি দুটোই আছে। আমাদের মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে এই দেশের জনগন। যারা ভোরবেলা থেকে সুনামগঞ্জের জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে বসে দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনার জন্য।

ভূতের মুখে রাম নামের মত বিএনপিও গণতন্ত্রের কথা বলে দেশে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগুন সন্ত্রাসের চেষ্টা করছে কিন্তু তারা তলে তলে কি কৌশল করছে তা আমরা জানি। আবারও আগুন সন্ত্রাস করবেন,জঙ্গীবাদকে মাঠে নামাবেন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারবেন আমরা তা হতে দেবনা। জানিয়ে দিচ্ছি আমরা মাঠে আছি। যে হাতে আগুন দেবেন আমরা ঐ হাত পুড়িয়ে দেব। যে হাতে ভাংচুর করবেন সে হাত ভেঙ্গে দেব। 

আন্দোলনে মরাগাঙ্গে জুয়ার আসেনা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন,সরকারের পায়ের তলায় মাটি নাই যারা বলে তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছে। শেখ হাসিনার সৎ সাহস আছে। তিনি বলেছেন,জনগনের ইচ্ছাই আমরা মেনে নেব। ফাইনাল খেলার জন্য আমরা প্রস্তুত।

ঘোষিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দুজনের নাম বলে যাবো। পকেটের লোক দিয়ে কমিটি গঠণ করবেননা।

৪৫ দিনের মধ্যে সকলের মতামত নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ঢেউ দেখে ওবায়দুল আনন্দে উচ্ছসিত ও অভিষিক্ত হন। হঠাৎ করেই তার মুখ দিয়ে বের হয়ে যায় একটি কবিতা। শেখ হাসিনার সরকার আবারও দরকার শ্লোগান দিয়ে তিনি বলেন,আবার আসিবো ফিরে,সুখে দু:খে ঢেউ খেলাবো সুরমা নদীর তীরে।