দিরাইয়ে বিভিন্ন এলাকার শিশু-কিশোকি তরুণরা স্মার্টফোন আর অনলাইনভিত্তিক নানা গেমে আসক্ত


Sylheter samachar24 প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১, ২০২২, ৬:৩০ অপরাহ্ন /
দিরাইয়ে বিভিন্ন এলাকার শিশু-কিশোকি তরুণরা স্মার্টফোন আর অনলাইনভিত্তিক নানা গেমে আসক্ত

দিরাই (সুনামগঞ্জ) : দিরাইয়ে বিভিন্ন এলাকার শিশু-কিশোর এমনকি তরুণরা স্মার্টফোন আর অনলাইনভিত্তিক নানা গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে চোখের ক্ষতিসহ তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কিশোর এবং তরুণরা বিভিন্ন স্কুল মাঠ, ফাঁকা জায়গা এবং বাজারের অলিতে গলিতে থাকা চায়ের দোকানে এক সাথে বসে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইলে ভিডিও গেইম খেলছে। ব্যবসায়ী শোভা মিয়া জানান, কিশোর ও তরুণ বয়সী ছেলেরা প্রতিদিন আমার দোকানের আশেপাশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইল চালায়। ওরা নাকি কি গেম খেলে।
অভিভাবক সুরঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন রাতে কাজকর্ম শেষ করে বাড়ি যাওয়ার সময় দেখা যায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্ররা মাঠে, রাস্তার পাশে একত্রিত হয়ে বসে মোবাইলে কেউ পাবজি ও কেউ ফ্রি-ফায়ার নামক গেম খেলছে। আমি এদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।
প্রসঙ্গত, ফ্রি-ফায়ার বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গেম। মোবাইল এবং কম্পিউটার দুটোতেই খেলা যায় এই গেম। তবে ফ্রি-ফায়ার কম্পিউটার ভার্সন থেকে মোবাইল ভার্সনটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এটিতে বেশি আসক্তি হয়েছে শিশু, কিশোর ও তরুণরা। অন্যান্য ব্যাটেল রয়্যাল গেমের মতোই ফ্রি-ফায়ার অনেক বেশি হিংস্র গেম এবং এর ভয়াবহতা এতই বেশি যে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষিপ্ততা সৃষ্টি করে। অধিক মাত্রায় হিংস্রতা থাকায় ১৩ বছরের কম বয়সীদের জন্য এই গেমটি ঝুঁকিপূর্ণ। অতিরিক্ত হিংস্রতা শিশু-কিশোরদের মধ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে এবং পরবর্তী জীবনে শিশুদের হিং¯্র করে তুলতে পারে এই গেম। বিগত ২৫ আগস্ট ২০২১ সালে ক্ষতিকর বিবেচনায় বাংলাদেশে অনলাইন গেম পাবজি এবং ফ্রি ফায়ার আদালতের নির্দেশে বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ভিপিএন সহ অন্যান্য সফটওয়্যার দিয়ে ঠিকই খেলে যাচ্ছে তারা। সচেতন মহল বলছেন, এসব গেম আসক্তির কারণে কিশোররা পারিবারিক, সামাজিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। সাথে পড়াশোনায়ও তাদের মনোযোগ কমছে। খেলার এক পর্যায়ে এসে তারা “ভায়োলেন্ট” হয়ে যেতে পারে। এমনকি এটি আলোচিত আরেক ‘বু হোয়েল’ গেমের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কেবল শারীরিক ক্ষতির কারণই নয়, এই গেমগুলো সেই সাথে মানসিক রোগের কারণও হতে পারে। শারীরিক মানসিক রোগের সাথে এই গেমটি একজন শিশু কিংবা কিশোরের উপর সামাজিক মূল্যবোধের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গেমটি যেহেতু একটি জায়গাতেই আটকে থেকে খেলতে হয়। তাই, এই গেম খেলা মানুষটি সামাজিকভাবে খুব বেশি সংযুক্ত থাকতে পারে না। আর এই কারণে সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সমাজের আচার ব্যবহার থেকেও ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে হয় সেই মানুষটিকে। সর্বোপরি একটা সময় একাকীত্ব বরণ করতে হয় তাদেরকে। এই গেমটি অতিরিক্ত খেলার কারণে চোখের সমস্যাও হতে পারে। আর সেই সাথে দেখা দেয় ঘুমের ঘাটতিও। কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে। আর চোখের সমস্যার সাথে ঘুমেরও ঘাটতি দেখা দেয় তাদের মধ্যে। আবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও অনলাইন গেম সম্পর্কে ঠিকমতো ধারণা না থাকায় অভিভাবকেরাও সন্তানের ঠিকমতো খোঁজখবর রাখতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিশেষ করে অভিভাবকদের ছেলেমেয়েদের বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, মোবাইল গেমে সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে কিশোর ও তরুণরা। অভিভাবকসহ সমাজের সবাই মিলে এ বিষয়ে তদারকি না করলে ভবিষ্যৎ ভয়ংকর হতে পারে। তাই, সবাইকে সচেতন হতে আহ্বান জানান তিনি।